শাসক বিরোধী কোন্দলে রণক্ষেত্র সিঙ্গুর, ফিরলো ১৬ বছর আগের স্মৃতি
সৌরভ আদক, সিঙ্গুর :- বিজেপির টিকিটে জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল শাসক দলের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে থানায় ঘেরাও বিজেপির। শাসক বিরোধী লড়ায়ে ফিরলো ১৬ বছরের রক্তাক্ত সিঙ্গুরের ঐতিহাসিক স্মৃতি।
তৃণমূল কংগ্রেসের যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল হুগলি জেলার সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন দিয়ে, একুশে জুলাইয়ের আগে সেই সিঙ্গুর ফের একবার খবরের শিরোনামে উঠে এলো।
এদিন জানা গেছে হুগলির প্রাক্তন সাংসদ লকেট চ্যাটার্জীর সাংসদ তহবিলের অর্থে একটি লাইট লাগানো নিয়ে বচসার জেরে বিরোধী দলের পঞ্চায়েত সদস্যের সাথে বচসা বাঁধে শাসকদলের। মুহূর্তেই বিরোধী পঞ্চায়েত সদস্যের উপর বচসা থেকে শুরু হয় শাসকদলের অত্যাচার। লাঠিসোঁটা নিয়ে পেটানোর ফলে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দেবনাথ পাত্র। আহত দেবনাথ পাত্রকে প্রথমে সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তার অবস্থার অবনতি দেখে সেখান থেকে চুঁচুড়া হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। অভিযোগ ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যদের মাও। কোন রাজনৈতিক ঘটনায় নয়, লাইট লাগানো নিয়ে পাড়াগত বচসা হয়েছে দাবী তৃণমুল নেতৃত্বের। পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিজেপির সূত্রে জানা গেছে, বাগডাঙ্গা ছিনামোড় গ্রাম পঞ্চায়েতের দাইপুকুর এলাকায় হুগলির প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের তহবিল থেকে গত বছরের অনুমোদিত একটি আলোক স্তম্ভ নির্মাণের কাজ হচ্ছিল এলাকায়। অভিযোগ সেই কাজকে বাধা দিয়ে এতদিন আটকে রাখা হয়েছিল। ভোটের পর গতকাল তার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেই কাজ কেমন হচ্ছে রাতে তা দেখতে যান স্থানীয় বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য দেবনাথ পাত্র। অভিযোগ তখন এলাকার তৃনমূল দুস্কৃতীরা তার উপর চড়াও হয়। লাথি ,চড় ,ঘুষি সহ বেড়ধকভাবে আক্রমন করা হয় পঞ্চায়েত সদস্যকে। অভিযোগ ,ছেলেকে মারধর করা হচ্ছে খবর পেয়ে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন মাও। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যায় সিঙ্গুর থানার পুলিশ। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার সিঙ্গুর গ্ৰামীন হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়। আজ সিটি স্ক্যানের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় আহত দেবনাথ পাত্রকে।
আহত পঞ্চায়েত সদস্য দেবনাথ পাত্র বলেন, প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এর সাংসদ তহবিল থেকে একটা লাইট লাগানো হচ্ছিল। সেটা রাতে দেখতে গিয়েছিলাম, তৃনমূলের লোকজন আমাকে গালগালি দেয়। প্রতিবাদ করলে বেধড়ক মারধর করা হয়। মা ছাড়াতে এলে মাকেও মারধর করেছে। বুকে, পেটে, মাথায় প্রচন্ড মারধর করেছে। যেহেতু আমি গ্ৰাম থেকে বিজেপির হয়ে জিতেছি, তাই আমাকে মারধর করা হয়েছে।
সিঙ্গুর বিধানসভার মন্ডল ২ এর বিজেপি যুবমোর্চার সহ সভাপতি উজ্জ্বল খামারু জানান, বিজেপি এই এলাকায় জিতেছে, রাজনৈতিক ভাবে তৃনমূল এই এলাকায় পরাজিত হবার কারনেই এই হামলা। গনতন্ত্রকে লাথি মেরে, একজন জন-প্রতিনিধিকে কিভাবে মারধর করা যায়? তা শুধুমাত্র তৃনমূলই করতে পারে। এটা আজ প্রমাণিত। অতীতে দুর্নীতি বিরোধী বেশ কিছু ঘটনায় নাম জুড়েছে দেবনাথ পাত্রের। শোনা যাচ্ছে কখনও ভুয়ো জব কার্ড কখনও কাট মানি নিতে শাসকের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেবনাথ পাত্র। বিরোধী পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার কারণে শাসকের অনেক সিদ্ধান্তই মেনে নিতে পারেনি দেবনাথ পাত্র।
পাল্টা এই ঘটনায় সিঙ্গুর ব্লক তৃনমূল কংগ্ৰেস সভাপতি আনন্দ মোহন ঘোষ জানান, বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওটা কোন রাজনৈতিক ব্যাপার নয়। একটা লাইট লাগানো নিয়ে বচসা হয়। যে বিজেপি সদস্যের কথা বলছেন, সেই ছুরি নিয়ে অন্যদের আঘাত করে তাতে তাদের হাতের আঙুলের কিছুটা অংশ কেটে যায়। পরে পাড়ার লোক জমায়েত হয়ে একটা ধাক্কাধাক্কি হয়। এর মধ্যে কোন রাজনীতির যোগ নেই।
১৬ বছর পর রাজ্যের রাজনৈতিক শিরোনামে ফের সিঙ্গুরের নাম। সামনেই একুশে জুলাই শাসক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচী এই আবহে শাসক বিরোধী এই দ্বন্দ্বের মোড় কোন দিকে নেয় সেটাই এখন দেখার।