*আর জি করের ছায়া হরিপালে? রণক্ষেত্র এলাকা*
সিঙ্গুর টিভি নিউজ ডেস্ক :
অর্ধনগ্ন ও অচৈতন্য অবস্থায় নাবালিকা ছাত্রী উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল হরিপালের বিডিও অফিস সংলগ্ন গোপীনগর এলাকায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ।
হুগলি জেলার হরিপাল থানার গোপিনগর এলাকার এক নাবালিকা মেয়ে অর্ধনগ্ন ও অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ খবর পেয়ে ওই নাবালিকা ছাত্রীকে উদ্ধার করে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপরই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বরজুড়ে বিক্ষোভ দেখান সিপিএম কর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সন্ধ্যায় নাবালিকা ছাত্রীকে অন্ধকার গলির মধ্যে অর্ধনগ্ন ও অচৈতন্য অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন এলাকার মানুষজন। পাড়ার মহিলারা খবর পেয়ে নাবালিকা ছাত্রীকে পোশাক পরান এবং নাম ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নাবালিকা ছাত্রী তাঁদের ঠিকানা জানিয়েছে।অসংলগ্নভাবে আরও জানিয়েছে, সে সিঙ্গুর থেকে টিউশন পরে বাড়ি ফেরার সময় হটাৎ করেই তাকে একটি চার চাকা গাড়িতে তুলে নেয় কয়েকজন। এরপর কী হয়েছে, তা আর কিছু জানাতে পারেনি ছাত্রীটি। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সিঙ্গুরের একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে ওই নাবালিকা। স্কুলের পাশেই এক গৃহ শিক্ষকের কাছে টিউশন পড়তে গিয়েছিল। টিউশন শেষে বাড়ি ফেরার জন্য সিঙ্গুর স্টেশনে যায় ট্রেন ধরার জন্য। এরপর আর বাড়ি ফেরেনি বলে দাবি পরিবারের। তারপর থেকেই খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবারের লোকজন। পরে হরিপাল এলাকা থেকে কেউ বা কারা নাবালিকা ছাত্রীর বাড়িতে ফোন করে ঘটনার কথা জানালে হরিপাল হাসপাতালে যায় পরিবারের লোকজন। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজ্যের নারী নিরাপত্তা নিয়ে, একদিকে আরজি করের ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য। তারপর ন্যাক্কারজনক ঘটনা অতিন্যাক্কারজনক ঘটনায় রূপান্তরিত হতে হতে নবম শ্রেণীতে পাঠরতা ছাত্র-ছাত্রীরাও যে এই রাজ্যে আর নিরাপদ নয় তা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। যা যথেষ্টই উদ্বেগের একথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য গতকাল এই রাজ্যের একটি প্রান্তে চার মাসের এক শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শিক্ষক দিবসের রাতে খড়গপুর থেকে আদ্রাগামী এক এক্সপ্রেসের মহিলা কামরায় উঠেছিলেন এক কর্তব্যরত পুলিশ কর্মী একটি অতিসুন্দরী মহিলাকে দেখে নিজের আবেগ আটকে রাখতে না পেরে গোকুলপুর স্টেশন পেরানোর পর হস্তমৈথুন করতে শুরু করেন গাড়ি মেদিনীপুর স্টেশন পৌঁছালে কামরার মহিলা যাত্রীরা চিৎকার করে মেদিনীপুর স্টেশন এর আরপিএফ কর্মীদের ঘটনাটি জানিয়ে ওই কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীকে গ্রেপ্তার করান। এইসব ঘটনা সামনে আসায় হয়তো আমাদের বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা তৈরি হচ্ছে কিন্তু আমাদের দৃষ্টিগোচরের বাইরে প্রতি চার সেকেন্ডে একটি মেয়ে শ্লীলতাহানি থেকে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আর প্রশ্ন চিহ্নের সামনে আসছে রাজ্যের মহিলাদের নারী নিরাপত্তা। চারদিন আগে সামনে এসেছিল এক শিক্ষকের কুকীর্তির ভিডিও সেখানে দেখা গিয়েছিল তিনি তার এক অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরতা পরীক্ষার্থীকে বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তাকে তার সামনে উলঙ্গ করে বসিয়ে হস্তমৈথুন করেছিলেন। আর এখানে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মেয়েটির ডাক্তারী পরীক্ষায় হয়তো ধর্ষণের কোন প্রমাণই পাওয়া যাবে না। কিন্তু আইনের সেই ফাঁক গলে ডিফেন্স ল-ইয়ার এইসব মানসিক রোগীদের আর কতদিন আদালতের কাঠ-গড়া থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবেন।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় রাজ্যের বিধানসভায় পাস হয়েছে বিশেষ নারী নিরাপত্তা আইন। যেখানে রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়েছে বিলটি আইনে পরিণত হলে ধর্ষণের শাস্তি হবে ফাঁসি। কিন্তু শুধুমাত্র এই আইন দ্বারাই কি এই সামাজিক ব্যাধি আটকানো সম্ভব তা আর একবার প্রশ্নচিহ্নের মুখে এনে দিল এইসব ঘটনা।
এখন দেখার বিধানসভা প্রণীত এই কড়া আইন এবং দেশের বিচার ব্যবস্থা কতটা সুবিচার পাইয়ে দেয় নির্ভয়া থেকে অভয়াদের। কতটা দাঁড়ায় হরিপালের নবম শ্রেণীতে পাঠরতা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নকান্ডারীর পাশে।