মেদিনীপুর বিধানসভায় ভোট শুরু তৎপরতা
সুমন পাত্র, পশ্চিম মেদিনীপুর:- গোটা রাজ্যে ছয়টি বিধানসভায় উপনির্বাচন যার মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুর বিধানসভাও। তাই আ
এবার সেখানে উপনির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হলো শুক্রবার থেকে। ভোটের দিন ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে। ১৩ ই নভেম্বর ভোট গ্রহণ, ফলাফল ঘোষণা হবে ২৩ শে নভেম্বর। শুরু হলো মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ। যদিও নির্বাচন আধিকারিক তথা সদর মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জী বলেন এবারে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে ক্যান্ডিডেট কে “নো ডিউস্ সার্টিফিকেট” জমা দেওয়ার নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।
শুরু হলো উপনির্বাচনে মনোনয়ন তোলা জমার কাজ আর পাঁচটি বিধানসভার মতো মেদিনীপুরের উপ-নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হল শুক্রবার থেকে। মূলত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১৫ টি বিধানসভার মধ্যে মেদিনীপুর শহর মেদিনীপুর সদর ব্লকের কিছুটা ও শালবনীর কিছুটা অংশ নিয়ে মেদিনীপুর বিধানসভা। গতবারে এই বিধানসভার বিধায়িকা ছিলেন অভিনেত্রী তথা বর্তমান সাংসদ জুন মালিয়া।কিন্তু ২০২৪ এর লোকসভা ভোট নির্বাচনে জুন মালিয়া মেদিনীপুর থেকে লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্র পল কে হারিয়ে সাংসদ হয়ে যান। ফলে তার সিটটা ছিল ফাঁকা। পুজো শেষ হতেই আর পাঁচটা বিধানসভার মতো পশ্চিম মেদিনীপুর বিধানসভারও উপনির্বাচনের ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্র মতে এই উপনির্বাচন হবে আগামী ১৩ই নভেম্বর। ফলাফল বেরোবে ২৩ শে নভেম্বর। ১৮ ই অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া। যা চলবে ২৫ শে অক্টোবর পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক সমস্ত তৎপরতা এবং প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে। এই নিয়ে গত বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন জেলার জেলা শাসক খুরশিদ আলী কাদরী। এই দিনই রিটার্নিং অফিসার তথা সদর মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য তুলে দেন সাংবাদিকদের হাতে।
জেলা নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২৩৬ নং মেদিনীপুর বিধানসভার এবারে ভোটার ২ লক্ষ ৯১ হাজার ৬৪৩ জন। যার মধ্যে মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ১০০ জন পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫৪২ জন। এবারে মোট পোলিং স্টেশন করা হয়েছে ৩০৪ টি। মোট মহিলা বুথের সংখ্যা ২ টি, সেক্টর ২৫ টি। পুরো বিধানসভায় চষে বেড়াবে ৪ টি ফ্লাইং স্কোয়াড টিম। ওয়েব কাস্টিং, CAPF ডেপ্লয়েড ১০০% করা হয়েছে। এবারে আগের বারের মতনই PWD ভোটার থাকছে ৭৮২ জন পাশাপাশি ৮৫ + বয়সের ভোটার ২৬০৭ জন। থার্ড জেন্ডার মাত্র ১ জন ভোটার। আগের বারের মতো এবারেও VVPAT থাকছে ৫৯৪ টি, CU – ৫৯৩, BU – ৬০৬ টি। প্রতিবারের মতন এবারেও হেল্পলাইন থাকছে ১৯৫০ নম্বর।
নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে সদর মহকুমা শাসক তথা নির্বাচন আধিকারিক মধুমিতা মুখার্জি বলেন,”আমাদের উপনির্বাচন প্রক্রিয়া, শুরু হলো ১৮ তারিখ থেকে। এই নির্বাচন হবে ১৩ ই নভেম্বর।তবে এবারে যারা ক্যান্ডিডেট হবে তাদের No-Due সার্টিফিকেট জমা দিতে বলা হয়েছে এপিঠ ওপিঠের সঙ্গে। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত এই বাই ইলেকশন করানোর জন্য।
খুব সম্ভবত এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একাধিক নাম ভাসছে জেলার এক প্রাক্তন যুব সভাপতি বর্তমান জেলার যুব সভাপতি থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি জেলার এক প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে লোকসভায় হেরে যাওয়া তমলুক কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের নামও শোনা যাচ্ছে কারণ হিসেবে উঠে আসছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার এই বিধানসভা। তাই সর্বজন স্বীকৃত এমন একজন প্রার্থীকে এই কেন্দ্রে আনা হতে পারে বলে অভিমত অনেকের। নতুন কোন আনকোরা মুখ প্রার্থী করে চমকও দিতে পারে দল বলে বলছেন অনেকে।
অপরদিকে এই মেদিনীপুর বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের উপরে সামান্য চাপা ক্ষোভ রয়েছে। এই বিধানসভার মধ্যে মনিদহ ব্রিজ, কনকাবতী ব্রিজ, ভাদুতলা – লালগড় রাস্তা সংস্কার, চাঁদড়া – পিড়াকাটা রাস্তা সংস্কার, চাঁদড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে শুরু করে একাধিক উন্নয়নের দাবি যেমন আছে। তেমনই প্রাক্তন বিধায়কের উপর সাংগঠনিক কাজকর্মে নিজের পছন্দমত লোককে বসিয়ে সংগঠনে খবরদারি করায় চাপা ক্ষোভ আছে শাসক দলের অন্দরে। মেদিনীপুর সদর ব্লকে বেশ কিছু অংশে সিপিএম বিজেপি থেকে ভেঙে আসা লোকজনদের সাংগঠনিক ক্ষমতা শীর্ষে বসিয়ে দেওয়ায় চাপা ক্ষোভ বেশ কিছু বুথে, সেই সাথে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রাক্তন যুব সভাপতি সাথে বর্ধমানের যুব সভাপতির দ্বন্দ্ব চিরকালীন। শাসকদলের কেউই মুখে স্বীকার না করলেও প্রাক্তন যুব সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ও বর্তমান যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ একথা শোনা যাচ্ছে মেদিনীপুর শহরে। মেদিনীপুর শহর ও মেদিনীপুর সদর ব্লক বর্তমান যুব সভাপতির চেনা মাঠ হলেও শালবনি ব্লক প্রাক্তন যুব সভাপতির হোম গ্রাউন্ড। তাই সেখানটায় জয়ের জন্য তার সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। অপরদিকে যাকে প্রার্থী করা হবে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা গুলো তার অংশে বেশি বেশি করে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। তাই সদর ব্লক যেমন চাইছে তাদের পরিচিত মুখ তেমনি শালবনি ব্লক চাইছে তাদের ব্লক থেকে কেউ প্রার্থী হোক।
একদিকে উন্নয়নের দাবি অপরদিকে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ঠান্ডা চোরা স্রোতের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে সামলে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস কাকে প্রার্থী করে সেদিকেই নজর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রাজনৈতিক মহলের।