গৃহযুদ্ধ বাংলাদেশে, ভারতের ভূমিকায় ঘিরে কৌতূহল তুঙ্গে
সুমন পাত্র, বিশেষ প্রতিবেদন :- বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রেন চালানো থেকে চিকেন নেক নিয়ে আশার আলো দেখছে ভারত।
২০১৮ থেকে বাংলাদেশে সংরক্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়ে আসছে। আন্দোলনকারীদের যুক্তিকে মান্যতা দিয়ে বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণ কোটা ও সংরক্ষণ আইন বাতিল করে। এবং জানানো হয় সমস্ত সরকারের নিয়োগ ও সংরক্ষিত পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। সরকারের এই যুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা হয়। এবং হাইকোর্ট সরকারের এই যুক্তির স্বপক্ষে করা সরকারি নির্দেশ নামাকে বাতিল করে ২০১৮ সালের সংরক্ষিত কোটা পদ্ধতি বহাল রাখে। হাইকোর্টের নির্দেশকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের হাজার হাজার ছাত্ররা রাস্তায় নেমে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত। রাজধানী ঢাকা সহ চট্টগ্রাম, রংপুর প্রভৃতি অঞ্চলে হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ছাত্রদের বিক্ষোভে প্রায় ৬ ঘণ্টার জন্য আটকে গেছে মৈত্রী এক্সপ্রেস, এমনকি ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষ থেকে ১ ঘণ্টার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল পুলিশকে। যেন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর ছেড়ে চলে যায়। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি পুলিশ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন। এই অবস্থায় একপ্রকার বাধ্য হয়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ১৭ জুলাই থেকে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা হয়েছে ছাত্র ছাত্রীদের আবাসিক হলগুলিও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘সকল নিহত এবং আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের সমবেদনা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য শিক্ষাকেন্দ্র ছুটি ঘোষণা করা হল। সেইসঙ্গে ছাত্র ছাত্রীদের আজ সন্ধ্যা ৬ টার আগে আবাসিক হল ছেড়ে নিজেদের বাড়ি চলে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।’ তবে আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীদের বক্তব্য তাদের আন্দোলনকে দমাতেই শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা হল। অপরদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বলেন, “কোটা সরকার পুনর্বহাল করেনি। সরকার বরং শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেছিল। বাতিলের পর কোটাহীনভাবে সরকারি ও অন্যান্য চাকরিতে নিয়োগ হচ্ছে। হাইকোর্ট রায় দিয়েছে কোটা পুনর্বহালের জন্য। সুপ্রিম কোর্ট সেটি স্থগিত করেছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বা বিচারাধীন বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাহলে আদালত অবমাননা হবে। এসব বুঝেও যারা জনভোগান্তি ঘটাচ্ছেন, সেই ভোগান্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর এবং আশা করব শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।” প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিনে ছাত্রলীগ এবং পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের জেরে গোটা ঢাকা জুড়ে বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও ইন্টারনেট পরিষেবায় রাশ টানা হয়েছে, জানা গেছে, ইতিমধ্যে আন্দোলনকারী ছাত্ররা ছাত্রলীগের সদস্যদের আবাসিক হলগুলি থেকে বের করে দিয়েছে। এদিকে আজ রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে আন্দোলনকারীরা কফিন মিছিল করে পুলিশি অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ করেন। বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হলেও ছাত্র আন্দোলন যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তা সরকার দ্বারা কি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশের অন্দরেই।
সালটা ১৯৭০ অবিভক্ত পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে এরপরেই শুরু হয় গৃহযুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকরা। সালটা ১৯৭১ ভারত ও রাশিয়ার সহযোগিতায় পাকিস্তান দুটো টুকরোতে ভেঙ্গে যায় জন্ম নেয় নতুন দেশ, নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে নতুন দেশ হিসেবে প্রথম স্বীকার করে ভুটান। তারপর একে একে সারা পৃথিবী। কিন্তু বেশি দিন সে সুখ স্থায়ী হয়নি। বাংলাদেশের বুকে জেগে ওঠে সেনাবাহিনী, গ্রেপ্তার করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। মেরে ফেলা হয় বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পুরো পরিবারের সকল সদস্যদেরও। শুধুমাত্র বেঁচে যান শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনা। কারণ তখন তিনি লন্ডনে পড়াশোনা করছিলেন। তিনি বাংলাদেশে ছিলেন না। থাকলে তাঁর কি পরিণতি হতো সে কথা সকলেরই জানা। শেখ হাসিনার জীবিত থাকার খবর পৌঁছায় ভারতের দিল্লিতে। শেখ হাসিনার উপর নিরাপত্তা বাড়ায় তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তারপর থেকে নানা সময় উত্তাল হয়েছে বাংলাদেশ।
কখনো বাংলাদেশের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আবার কখনো বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে ভাষা আন্দোলনে। বাংলাদেশের মুকুটে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের এক বৃহৎ পালক। যা বাংলাদেশের প্রতিবাদী মূলক ভাব ধারাকে সারা বিশ্বের মাঝে তুলে ধরে। অপরদিকে ভারত চায় বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রেন চালাতে যাতে উত্তর-পূর্ব ভারতের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নত হয়। অপরদিকে বাংলাদেশ চায় ভারতকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে আরও মজবুত করতে সেই মতো চুক্তিও হয়েছে বলে খবর। তাই বাংলাদেশের এই গৃহযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কি হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের এই গৃহযুদ্ধ থামিয়ে ভারত কি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ও কূটনৈতিক চালে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। নাকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না ভারত সেদিকে নজর তাবড় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।