গোটা বর্ষাকাল জুড়ে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের দিশা দেখায় জঙ্গলমহল জুড়ে কুড়কুড়ি ছাতু
সিঙ্গুর টিভি নিউজ ডেস্ক, ৮ আগস্ট, ২০২৪, বৃহস্পতিবার : বাঙালি মানে খাদ্য রসিক, আর মনোমুগ্ধকর সুস্বাদু খাবার খেতে কার না পছন্দ। একটু মসলা দিয়ে বেশ মুখরোচক খাবার হাজির হলে জিভে জল আসে সকলের, আর বর্ষাকালে রাঢ় বাংলায় খাদ্য রসিক মানুষের সামনে হাজিরও হয় এই খাদ্যটি। ছোট্ট ছোট্ট মার্বেলের মতো দেখতে এই খাদ্যটি মাংসকেও প্রায় টেক্কা দেয়। ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি এই খাদ্যটি পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলায় অত্যাধিক প্রচলিত হলেও, খাদ্যটির প্রাপ্তিস্থান জঙ্গল।
ভোরে সূর্য ওঠার আগে উষার ছটায় জঙ্গলমহলের একাধিক মানুষ জঙ্গলের নির্দিষ্ট এলাকায় গিয়ে সংগ্রহ করে কুড়কুড়ে ছাতু, ছাতুর মধ্যে জলীয় পদার্থ থাকায় ওজন টানে যার ফলস্বরূপ কোন ব্যক্তি দুই তিন কিলো সংগ্রহ করতে পারলেই তার হাতে আসে নগদ কড়কড়ে হাজার থেকে বারো শো টাকা।
জঙ্গলমহলের অনেকের সাংসারিক অভাব মিটিয়েছে কুড়কুড়ে ছাতু। মূলত ছত্রাক জাতীয় এই খাদ্যটিকে মসলা দিয়ে রান্না করলে যে কারোর জিভে জল আসতে বাধ্য। বিভিন্ন রেস্তোরা থেকে বাড়ির রান্নাঘর স্কুলের মিড ডে মিল থেকে বাড়ির হেঁসেলে গিন্নীদের গোটা বর্ষাকাল জুড়ে প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে কুড়কুড়ে ছাতু।
কিন্তু বর্তমানে এই খাদ্যটি সংগ্রহে গিয়ে জঙ্গলে বিভিন্ন প্রাণীর দ্বারা মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এবং তাছাড়াও মানুষ জঙ্গল কেটে গড়ে তুলছে সভ্যতা আর তার সাথে সাথে এই খাদ্যটির প্রাপ্তিস্থান গুলি বিলুপ্ত হয়ে উঠছে। হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতলে। তাই বর্তমানে জঙ্গলমহলের হাটে বাজারে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে কুড়কুড়ে ছাতু। কুড়কুড়ে ছাতুর জায়গা দখল করছে বর্তমানে বহুতল বিশিষ্ট ফ্ল্যাট। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মেদিনীপুরের বাজারে ৫৫ বছরের এক মহিলা বললেন আমার বয়সটা তখন কুড়ি পঁচিশ ওই খইরুল্লার চকের জঙ্গলে গিয়ে ছাতু কুড়িয়ে আনতাম বিক্রি করতাম এখানে। এখন খয়রুল্লাহ চক ছাড়িয়ে আরও কয়েক কিলোমিটার ভর্তি হয়ে গেছে বাড়িতে। আগে ওখানে শিয়াল ডাকত। যেতে ভয় লাগতো এখন সারাদিন, সারা রাত লাইট জ্বলছে।
পৃথিবীতে প্রতিটি জীব পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে চলে একটি প্রাণী বা উদ্ভিদ কেন একটি ছত্রাকেরও বিলুপ্তি ঘটলে পৃথিবী হারিয়ে ফেলবে ভারসাম্য আর তার ফলে ওয়ানাড় এর মতন ঘটনা সামনে আসবে। তাই এই বিষয়টাতে আমাদের সতর্ক হয়ে চলা উচিত। গাছ কাটার বদলে লাগানো উচিত এমনটাই মতামত বিশেষজ্ঞদের।
আর হয়তো এভাবেই সভ্যতার মারন থাবায় হারিয়ে যাবে অনেক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খাবার। বিলুপ্তি ঘটবে সভ্যতার বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে চাওয়া এরকম ছত্রাক গুলির। না তাদের আর্তচিৎকার কেউ শুনবে না। তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। পৃথিবীতে তাদের টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই। তারা যে ছত্রাক।
পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে সুমন পাত্রের প্রতিবেদন।