Murshidabad : ‘আন্দোলনের নামে নাশকতা!’—রেলগেটে আগুন, রিলে রুম গুঁড়িয়ে দিল উন্মত্ত উশৃঙ্খল জনতা, টহলে BSF
শুক্রবার দিন অর্থাৎ ১১ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার সকালবেলা হতেই মুর্শিদাবাদের একাধিক জায়গায় সাধারণ মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে। রোদ ঝলমলে সকালে যারা অফিস বা কাজে বেরিয়েছিলেন, তারা মাঝপথে আটকে পড়েন হঠাৎ শুরু হওয়া বিভিশিখাময় বিক্ষোভের মুখে। বাস, অটো, রিকশা—সবকিছু নিমেষে থমকে যায়, আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যেতে থাকে একের পর এক। চারদিক থেকে কেবল আওয়াজ আসছিল—‘প্রতিবাদ চলছে, রাস্তা বন্ধ’। কিন্তু এই প্রতিবাদের রূপ যে এতটা হিংসাত্মক হবে, তা আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি কেউই।
ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদের নামে যে এই আন্দোলন ডাকা হয়েছিল, তার পিছনে ছিল ধর্মীয় আবেগের উসকানি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বার্তায় উত্তেজনা ছড়ায়, আর সেই উত্তেজনা রাস্তায় এসে রূপ নেয় হিংসায়। ধুলিয়ান, সুতি, সামসেরগঞ্জের মতো শান্ত এলাকা মুহূর্তে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। আগুন দেওয়া হয় সরকারি বাস ও ব্যক্তিগত গাড়িতে। ছোড়া হয় ইট-পাটকেল। নিরাপত্তা রক্ষীরা তখনও পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেননি।
রেলপথে বসে পড়লেন বিক্ষোভকারীরা, বহু যাত্রী আটকে :
বিক্ষোভের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ দেখা যায় শুক্রবার রাতে, যখন বিক্ষোভকারীরা রেল লাইনের উপর বসে পড়েন। ফলে আটকে যায় একের পর এক ট্রেন। প্রায় পাঁচ হাজার যাত্রী রাতভর আটকে থাকেন ধুলিয়ান গঙ্গা ও নিমতিতা স্টেশনের মাঝে। পরে তাঁদের উদ্ধার করে বিকল্প পথে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে বড়সড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে রেলের। সকাল হতেই দেখা যায়, রেলের রিলে রুম থেকে কন্ট্রোল রুম পর্যন্ত ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পোড়ানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি।
রেলের দাবি—চালানো হয়েছে পরিকল্পিত হামলা :
পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, সম্পূর্ণ পরিকল্পনা মাফিক এই হামলা চালানো হয়েছে। ধুলিয়ান গঙ্গা ও নিমতিতা স্টেশনের মাঝে ৪৩ নম্বর রেলগেট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রিলে রুম, লিফটিং ব্যারিয়ার, কন্ট্রোল রুম—সব ভাঙচুর করে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বহু দামি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েকটি বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। এখনও এলাকায় থমথমে পরিবেশ, টহল দিচ্ছে বিএসএফ।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, এই রিলে রুম থেকেই ট্রেন কোন লাইনে আসবে, কোন লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই ঘর ভাঙা ও যন্ত্রপাতি পুড়িয়ে দেওয়ার ফলে রেল পরিষেবা কার্যত অচল অবস্থায় পৌঁছেছে। পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, লাইনের ক্ষতি এতটাই, যে আপাতত কিছু ট্রেন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এলাকাবাসী ও যাত্রীরা আতঙ্কিত—এভাবে চলতে থাকলে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দই থমকে যাবে। আন্দোলনের নামে এই হিংসা, সম্পত্তি নষ্ট ও লুঠ-তাণ্ডব প্রশাসনকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।