বছর ব্যাপী ক্লাস না করে বেতন পাচ্ছেন শাসকদল ঘনিষ্ঠ শিক্ষক, বালিশ ছাড়াই নাকে তেল দিয়ে ঘুম প্রশাসনের
সুমন পাত্র, মেদিনীপুর :- রাজনীতিকে ঢাল করে স্কুলে যান না অনেক শিক্ষক। কেউ জেলা পরিষদ সদস্য কেউ আবার নামিদামি স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। দুই মেদিনীপুরও ঝাড়গ্রামে উঠে এলো এমনই চিত্র।
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু সেই শিক্ষাই যদি রাজনীতি ঢোকে ভেঙে পড়ে মেরুদন্ড। দুর্বল হয়ে পড়ে জাতি। তাই কোন একটা জাতির সবল হয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেরিয়ে অত্যাধুনিক ঝা চকচকে বৈজ্ঞানিক যুগে এগিয়ে চলার জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে প্রতিটি দেশ। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা থেকে শিক্ষক শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষা সামগ্রী, প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক ছোঁয়া বিদ্যমান। তেমনই এক চিত্র উঠে এলো পূর্ব, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন স্কুলে। কেউ রাজ্য স্তরের নেতা, কেউ জেলা পরিষদের সদস্য, কেউ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ আবার খাতায়-কলমে তারা শিক্ষক দিব্যি বেতন পান কিন্তু স্কুলের ধারে কাছে যান না। এমনটাই চলে আসছে, পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানগোলা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, কেশপুর এমনকি ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর ও বিনপুর এলাকার বহু স্কুলে।
কেউ কেউ তো স্কুল ছেড়ে ব্যবসা করছেন যেখানে স্পষ্ট তো আইনত শিক্ষকদের ব্যবসা করায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আছে। ভগবান গোলার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবার ক্লাস করান তার ভাইয়ের স্ত্রীকে দিয়ে। কেশপুরের এক স্কুলে এক শিক্ষকের পরিবর্তে ক্লাস নেন পিওন। গড়বেতার একটা স্কুলের শিক্ষক ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে তার বাড়ি। তিনি শেষ কবে স্কুলে এসেছেন মনে করতে পারছেন না স্থানীয়রা। গোপীবল্লভপুরের এক শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি করেন আরো একটি চাকরি। বিনপুর এক শিক্ষক স্কুলে 11 টা তে এলেও ১১ টা ১৫ থেকে ২০ বেজে ওঠার আগেই স্কুল থেকে পিঠ টান দেন।
অপরদিকে এই তালিকায় বিরোধী দলের অনেক শিক্ষকও রয়েছেন। বিজেপি ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষক হুগলি থেকে বর্ধমান মালদা থেকে চব্বিশ পরগনা দাপিয়ে রাজনীতি করলেও স্কুল মুখো হননি দীর্ঘকাল যাবৎ। তার যুক্তি স্কুলে প্রয়োজনের থেকে বেশি শিক্ষক রয়েছে। আমি না গেলেও চালিয়ে নেবে। কিন্তু দিব্যি বেতন তুলছেন।
এই প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক বিজেপি নেতা বলেন এই ছবি এক দুটো নয়, কাঁথি নন্দকুমার শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকেও এমন চিত্র আপনাকে আমি দেখাবো ওরা দাপটে তৃণমূল নেতা ফলে ওদের হয়ে মুখ খুলতে সাহস করে না কেউই। বর্তমান জমানায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা একদম ভেঙ্গে পড়েছে। অপরদিকে ওই তারিখে বিজেপির শিক্ষক নেতাদের নাম থাকায় একটু বিড়ম্বণাময় ভঙ্গিতেই বলেন হয়তো অনেকে অসুস্থ থাকায় স্কুলে যাননি খোঁজ নিয়ে দেখব। স্কুলে না গেলে ছুটি নেওয়া উচিত। ছুটি প্রাপ্য এবং অধিকার। ছুটির বাইরে স্কুলে না গেলে তার বেতন না নেওয়াই কাম্য।
পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জুড়ে এই চিত্র আর কতদিন দেখতে হবে আর কতদিন দেখতে হবে এই ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা। কতদিন চলবে অরাজকতা। শিক্ষা কি ব্রাত্য হয়ে থাকবে নাকি ব্রাত্য বসুর হাত ধরে শিক্ষা ফিরবে নিজস্ব রূপে। বাংলা হয়ে উঠবে সোনার বাংলা, সেদিকেই নজর থাকবে আমার আপনার সকলের।


